কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা!

Ashok Kumar
By -
0

কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা!

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৪:৪৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪


কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা!

ঢাকার নবাবি আমলের মহামূল্যবান হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই নূর’ ঘিরে সৃষ্ট রহস্যের জট খুলছে না। ২০১৬ সালে  আসল হীরকখণ্ডটি রাজধানীর  সোনালী ব্যাংক সদরঘাট শাখার ভল্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে বলে দাবি করেছিল নানা মহল। 

সেসময়ে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার তাগিদ দেওয়া হয়েছিল।সাথে ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা পরিদর্শনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। এরপর চলে গেছে দীর্ঘ সময়। পরিদর্শন তো দূরে থাক, এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটিই গঠিত হয়নি।কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে থেমে যায় সে তদন্ত।

দরিয়া-ই-নূর আলোর নদী বা আলোর সাগর বিশ্বের অন্যতম বড় হীরকখণ্ড, যার ওজন প্রায় ১৮২ ক্যারেট। এটির রঙ গোলাপি আভাযুক্ত, এ বৈশিষ্ট্য হীরার মধ্যে খুবই দুর্লভ। প্রত্নসম্পদ গবেষকদের মতে, সারাবিশ্বে বড় আকৃতির দুটি হীরকখণ্ড সবচেয়ে মূল্যবান ও ঐতিহাসিক। এর একটি কোহিনূর, অন্যটি দরিয়া-ই-নূর। কোহিনূর আছে ব্রিটেনের রানির কাছে এবং দরিয়া-ই-নূর ঢাকায় সোনালী ব্যাংকের ভল্টে।

সপ্তদশ শতাব্দীতে দরিয়া-ই-নূর অন্ধ্রপ্রদেশের মারাঠা রাজার কাছ থেকে হায়দরাবাদের নবাবদের পূর্বপুরুষ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে নেন (যখন বাংলাদেশে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত)। বিভিন্ন হাত ঘুরে অবশেষে এটি পাঞ্জাবের শিখ মহারাজ রণজিৎ সিংহের হাতে পৌঁছে। তার বংশধর শের সিংহ ও নেল সিংহের হাতে এটি ছিল। ১৮৫০ সালে পাঞ্জাব দখলের পর ইংরেজরা কোহিনূরের সঙ্গে দরিয়া-ই-নূরও করায়ত্ত করে। ১৮৫০ সালে প্রদর্শনীর জন্য কোহিনূর ও দরিয়া-ই-নূর ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। হীরকখণ্ড দুটি মহারানি ভিক্টোরিয়াকে উপহার হিসেবে দেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। পরে মহারানি কোহিনূর নিজের কাছে রাখলেও দরিয়া-ই-নূর বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন এটি বিক্রির জন্য ভারতে ফেরত আনা হয়। ব্রিটিশ-ভারতীয় সরকার ১৮৫২ সালে দরিয়া-ই-নূর নিলামে তুললে ঢাকার ভাগ্যবান জমিদার খাজা আলিমুল্লাহ ৭৫ হাজার টাকায় এটি কেনেন।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুত্রের দাবি কোহিনূর হীরা যেমন বিভিন্ন হাত বদলের মাধ্যমে সর্বশেষ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়,ঠিক একইভাবে এই দরিয়া-ই-নূর হীরা নিজের করায়াত্ত করে বিদেশে পাচার করেছেন, পালিয়ে যাওয়া  সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রমাণ হিসাবে সবাই বলছেন, বিদেশি বিষেশজ্ঞদের উপস্থিতিতে ব্যাংকের ভল্ট খুলে তা যাচাইয়ে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও তাঁর কোন কূল কিনারা করে নি বিগত হাসিনা সরকার।সংশ্লিষ্টদের অনেকের দাবি দরিয়া ই নূর শেখ হাসিনা বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন।তারা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছেই দরিয়া ই নূর হীরা রহস্যের জট খুলে জনগণের কাছে সত্য প্রকাশের জোর দাবি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য,দরিয়া-ই-নূর ঢাকার নবাবরা সাধারণত আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিধানকালে বাজুবন্দ হিসেবে ব্যবহার করতেন। নবাব সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর এটি নবাব এস্টেটের চিফ ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে চলে যায়। এরপর বহুদিন ধরে কলকাতার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির হেফাজতে ছিল। প্রতি বছর ফি বাবদ ২৫০ টাকা দিতে হতো নবাবদের। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বিভাগীয় কমিশনার এবং রাজস্ব  বোর্ডের অনুমতিক্রমে নবাব পরিবারের সদস্য খাজা নসুরুল্লাহর সঙ্গে এস্টেটের ডেপুটি ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন কলকাতার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির কাছ থেকে ১৯৪৯ সালে দরিয়া-ই-নূর ঢাকায় নিয়ে আসেন। এরপর ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঢাকা শাখায় রাখা হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর ঢাকা ইম্পেরিয়াল ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। তখন দরিয়া-ই-নূর রাখা বাক্সটি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের সদরঘাট শাখায় গচ্ছিত রাখা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যাংকটির নতুন নামকরণ হয় সোনালী ব্যাংক।
 
সূত্রমতে, নানা অব্যবস্থাপনার কারণে জমিদারি আয় কমে গেলে আর্থিক দৈন্যে পড়েন নবাব সলিমুল্লাহ। হাতি, ঘোড়া, উটের বহরসহ স্থাবর-অস্থাবর অনেক সম্পত্তি তিনি বিক্রি করে দেন। তাতেও না কুলালে তিনি ঋণ নেন। ১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহ যখন তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ৪১৪২ নং দলিলমূলে ৩ শতাংশ সুদে ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধের শর্তে ১৪ লাখ রুপি ঋণ নেন। কিন্তু অদ্যাবদি এ ঋণটি নবাব পরিবার পরিশোধ করেনি বিধায় এই হীরকখণ্ডটিসহ ঢাকার নবাবদের অন্যান্য অলঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী সোনালী ব্যাংকেই রক্ষিত আছে।

এক গবেষণায় ২০ বছর আগে দরিয়া-ই-নূরের মূল্য ধরা হয়েছিল ৫২ কোটি টাকা। যখন টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত তখন দরিয়া-ই-নূরের মূল্য ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ওই হিসাব অনুযায়ী এখন চালের প্রতি কেজির মূল্যমান ধরলে দরিয়া-ই-নূরের বর্তমান বাজারমূল্য শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

ফুয়াদ

Post a Comment

0Comments

Please Select Embedded Mode To show the Comment System.*